মরুতৃষার অজেয় ইশারা

মরুতৃষার অজেয় ইশারা


তারাদের মৌন মিছিলে হাঁটছে চাঁদ সূর্য
যে তারাগুলো কবরে শুয়েছিল
যে তারাগুলো পঞ্চভূতে হয়েছিল লীন
যে তারাগুলো মাতৃগর্ভে অপেক্ষা করছিল
সেই আপাত মৃত অথবা আগামী
অদৃশ্য জানালা দিয়ে ঝুঁকে পড়েছে সবাই

আমার সত্তার ভিতর আর এক সত্তায় শুনছি ছায়াদের পদধ্বনি 
মনে পড়ছে কবেকার সেই পাড়াগাঁর দিনরাত
একটা বেতাল নৃত্যের তালে আমার অহর্নিশ 
আদি নেই অন্ত নেই বরাভয়ের পীঠে চেপে বসে আছি
হে জাহানের বাদশা এত অলিগলি তোমার
ঘূর্ণনের অবিরাম স্রোতে ভেসে যাচ্ছে দেওয়া নেওয়া
পরম রহস্যের মানে খোঁজার অভিধান তোমার মুঠোয়
ঘামের রুধির স্পর্শ জলে ডাঙ্গায় গাছে পাতায় পাতায়
ধরা দাও অদৃশ্য মাধুরী পান কর আমার বুক চেরা মোহ
অচেনা চারপাশ অচেনা আত্মীয় বান্ধব
কথা রাখার দায় তারা হয়ে হেঁটে যাচ্ছে মিছিল
মিছিলের গা বরাবর মিছিল
পাকদন্ডী ওঠানামা তবুও নীরব হেঁটে যাওয়া

কারা যেন বলেছিল কষ্ট যাবে সুবর্ণ পৌষমাস
কুঁয়ো ভর্তি স্বপ্নগুলো বালতি তুলে মেপেছিল জল
নির্ঘুম রাতের কাঁথা পান্ডুলিপির মতন সাজিয়েছিল সুডৌল খোয়াবনামা
জিঞ্জির খোলা আঁতুড়ঘর আমাকে ডাকে না আর
নির্বাসনে মেতে আছি নেই তো আমারও কথা রাখার দায়
হে অগোচর মার্জনা কর 
খেয়াল খুশি যন্ত্রণা মন্ত্রনা যত
নোনা জলের স্বাদ ভুলে গেছি
বারান্দার গল্পগাছা কেড়ে নিয়েছে কালান্তর

উঠোনের পেয়ারা গাছের ফাঁকে দেখেছি তারার ঝিকিমিকি
আজ আমার আবাস শুধু অরণ্যে রোদন
আজ আমার চলাফেরা মোল্লার দৌড়
তারাদের হাঁটাহাঁটি গায়েবী ছবি আঁকে ঘিলুর ভিতর
কারা যেন বলে গেছে আবার আসবে সেই পৌষমাস
রাতের জড়ানো ছেঁড়া কাঁথা পান্ডুলিপি স্বপ্নেরা অনায়াস 
বহু প্রাচীন তারাদের মিছিল এগোয় দিনরাত

সারি বেঁধে হেঁটে যায় জীবনের গান
টুপটাপ ঝুপঝাপ নাগাড়ে দেমাক
জলাশয়ের আনাচেকানাচে জমে ওঠে অবিরল
জমে ওঠে জমাট বাঁধে তারাদের অলৌকিক শপথ
মিছিলের পাশে চুপচাপ চলে যায় খামারের ঝোপঝাড়

বাউটি পরা হাতে মায়ের গোবর লেপা উঠোন ঢুলুঢুলু
নটে শাক তোলা বুবুজানের হাত ভরে দেয় স্মৃতিপট
কী করে ভুলি ভিটেছাড়া সেই বিষাদসিন্ধু
আমি তো চেয়েছি দগ্ধ সুখের অনিমেষ হলাহল 
অমৃতে স্বাদ নেই আর তিক্ত বড়ই সম্পর্কের সেতু
ফিরে যাওয়া হয় না আর শিকড়ের টান
মত্ত প্রলাপ যেন বালখিল্য কথার জাবর
এসো তবে তারা হই রাখি পরিক্রমণে মিছিল
তারাদের মৌন মিছিলে উত্তাল আকাশের করিডর

স্বর্গচ্যুত আদমের ছানা পড়ে আছি জনারণ্যে একা
বাটি বাটি মেদুরতা সাজিয়ে ধরে আমার ক্ষুধা
কতবার ছুটে যায় মরুতৃষ্ণিকার অজেয় ইশারা
ক্লান্তির ধূপছায়া পরিশেষে শুনি গভীর জল পতনের শব্দ
স্তব্ধ আকাশের চলনবিলে ঝিরিঝিরি আমার কামনা
সওদাগরের নৌকার রোদনে ভাসে অনন্তের ঘাট
মায়ের ভিজে শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে মিছিল দেখি
বেওয়ারিশ হাওয়ার কান্নায় মেহনত মিছিলের কায়া
মিছিল আনবে দিন এমনই বিশ্বাসের খুঁটি
মিছিল ফিরিয়ে দেবে মানুষের আদিম বর্ণমালা
মিছিল নিভিয়ে দেবে চরাচরের দাউদাউ

স্তব্ধবাক মিছিলে তারারা ক্রমশ অনন্তগামী 
হে হিতার্থী তারাগণ নাও নাও আমার বাসনা উল্লাস
খড় গোঁজা চুলোয় ফুটন্ত ভাতের হাঁড়ির আঘ্রাণ
দাগক্ষত মুছে যাক নিরন্তর সৃজনের স্রোত
মাটির শাশ্বত আলোয় দেখি তারাদের গড়ন 
তারাদের বরণ করে সনাতন জল মাটি গাছ 
মিছিলে মিছিলে ছয়লাপ মহাশূন্যের ডহর 

তবুও তারারা হাঁটে
নীরব প্রতিবাদ শোনে বাদশা দোজাহান 
আবার হবে ভোর
দিনের আলোয় গা সেঁকে নেবে আলপথ
মানুষের কথা বলা পরস্পর
পাখির কিচিরমিচির
আমাদের হতাশ্বাস আর উদ্দাম উৎসব
একাকার সব ফ্যারিস্তার অঢেল হাসি
শোনো পাঁজরের দাঁড়ে ভাত বেড়ে হাঁকডাক
অভিনব সাঁঝবাতি জ্বলা সন্ধে ঘনায়
হাঁটাহাঁটি আবার মিছিল জন্মান্তর 

তারাদের মৌন মিছিলে উত্তাল আকাশের করিডর

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অভিনব প্রণয়ের পান্ডুলিপি

সম্পর্ক

স্বগতোক্তি