পোস্টগুলি

এপ্রিল, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সম্পর্ক

সম্পর্ক দূরে যতই থাকি- বুঝতে পারি তুমি এতক্ষণে বাড়ি পৌঁছালে কি না। তুঁতে রং এখনো তোমার বেশ পছন্দের, তাও জানি। বেড়াল ছানাগুলো বিছানায় না থাকলে তোমার ঘুমই আসে না। সকালে উঠেই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে- মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকো নির্ণিমেষ... মেঘ করলে তোমার মন কেমন করে। মেঘলা দিনে তুমি যে কী ভাবতে থাকো! জানি, ছাতিম পাতাটি আজো যত্নে রেখেছ ছাতিম পাতার গন্ধে তোমার বেডরুম... চোখ বুজে বলে দিতে পারি তোমার সব খবর। আর নিশ্চিত জানি- দেখা হবে না আর কোনোদিনও, আমাদের!

ঘরের পথে গাঁ গঞ্জ

ঘরের পথে গাঁ গঞ্জ গল্পটা জানা খুব জরুরী কার্তিকের হিম জ্যোৎস্নায় চোখ রাখো তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে লতানে পথ মাথা নাড়ছে আউস ধানের শীষ আমানি রঙের মেঘ দিচ্ছে উঁকি ঘরে ফিরবে গাঁ গঞ্জ শস্যদানা খুবলে নেওয়ার দিন শেষ ভাত বেড়ে ডাকছে আমাদের মা চল ভাই আমরা গামছা কাঁধে চানে যাই

শব্দে খনিজ গন্ধ আঁকছে অপূর্ণ চাঁদ

শব্দে খনিজ গন্ধ আঁকছে অপূর্ণ চাঁদ অঘোরে পড়ে থাকা শব্দ মাড়িয়ে অচপল হাওয়ায় খনিজ গন্ধ আঁকছে  বাঁকা চাঁদ  অন্ধকার জমে থাকা বাঁশঝাড়ের মাথায় উঁকি দিচ্ছে জন্মান্তর অতিক্রান্ত দিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে কিশোরী শব্দ  আড় নয়নে দেখে রাতের ঘরদুয়ার নক্ষত্রদের প্রহর বাঁধা অভিসারে ঘোড়ার মতো ছুটে চলেছে গ্রহান্তরের রাস্তাঘাট জিরিয়ে নেওয়া শব্দ বাঁকা চাঁদটির দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে বেহিসাবি চুম্বন শব্দের বামন হাত গড়িয়ে গড়িয়ে ছুঁতে চাইছে অপূর্ণ চাঁদটির গান রাতের গায়ের লোম খাড়া করা শিহরণ লুফে নিচ্ছে শব্দের সামুদ্রিক অনুরাগ সুদূর কক্ষপথের জানালার ফাঁক দিয়ে শূন্যতার চোখ গিলে খাচ্ছে শব্দের লাবণ্য  বাঁকা চাঁদের পিঠে ঝুলে থাকা রাতের সংসারে অপূর্ণ চাঁদের গান ভিজিয়ে দিচ্ছে শব্দজন্ম গভীর রাতের নিশ্চুপ তুলিতে  শব্দে খনিজ গন্ধ আঁকছে অপূর্ণ চাঁদ

অবিরাম অনন্ত অন্বেষণে

অবিরাম অনন্ত অন্বেষণে বিবমিষা জড়াও আমাকে লেলিহান শুঁয়োপোকা জিভের চেটে খাওয়া থেকে অন্ধকার শোনাও আমাকে বজ্রবিদারী শানিত চোখের অনর্গল লাভাস্রোত গান মহামারী দেখাও আমাকে কোটরাগত জ্যান্ত স্বপ্নের কিলবিল কাদামাখা গড়ন ফুটিফাটা দিন জাগাও আমাকে কতদূর বাঁচার সাধ দীর্ঘতর অনিবার্য অনুরূপ নিশ্চুপ ডোবাও আমাকে থইথই অগাধ যুগান্তরে চিৎ সাঁতার দেহাতি কামনা রঙ রুদ্রবীণা শেখাও আমাকে স্বরলিপি গৎ ভেজা উঠোনে কোলাকুলি টুপটাপ মাতন ঝরাপাতা জানাও আমাকে বৃন্তখসা কৌশল আজ নয় কাল কুয়াশা ঘেরা অনন্তের পথ

কলার ভেলায় গল্প বলছে লখিন্দর

কলার ভেলায় গল্প বলছে লখিন্দর কলার ভেলায় ভাসছে মধ্যযুগের মৃতদেহ  এঁটেল মাটির ঘাটের শরীরে শিহরন পাড়ে দাঁড়িয়ে গেঁয়ো যোগী কিছু কৌতূহল বর্বরতার মুখে চুনকালি মাখিয়ে  চোখের বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে মনসামঙ্গল ভেলার পাশে উড়ছে বেহুলার সাদা থান বুক চাপড়ানো কান্নাকাটি লুফে নিচ্ছে জল দুপুর গড়িয়ে বিকেল এলো মনখারাপের ঢেউ ঘাট লাগোয়া কলার ভেলা ছুঁতে চাইছে মেঘ অস্তাচলে টগবগিয়ে ভেলা যাচ্ছে হেঁইয়ো সাবাস সাদা থান হেঁইয়ো সাবাস নারী হেঁইয়ো সন্ধ্যা হল রাত্রি এলো ভেলার গতি তরতর শীৎকারে ভরে যাচ্ছে বেহায়া জলসাঘর কলার ভেলায় মধ্যযুগ কলার ভেলায় গল্প বলছে লখিন্দর কলার ভেলায় স্বপ্ন বুনছি ফিরে আসবে লখিন্দর

দুঃখ খোঁজে হাওয়ার রাত

দুঃখ খোঁজে হাওয়ার রাত ভেঙে যায় হাওয়ার রাত। দুঃখ কুড়োতে গান গাই, অবসর। জিভের ভিতরে  বয়ে যায়, নদী। অসময়ের চোখের তারা চিকচিক, সময়। আসা যাওয়া কামরাঙা আলো, দেখাদেখি। অনিবার্য শ্বাস গলে যায় জমাট স্বাদ। মেঘের ইশারায় জ্যোৎস্নায় ভেজে মাঠ। দুঃখের বৈতরণী গল্প শোনায়, অনর্গল। আলপথ চুপচাপ ভেঙে যাওয়া, ইতিহাস। পাহাড় গড়ায়  আহ্লাদী হাতে, ফলিত বিস্ময়। ডাকে রাত নিবিড় চলা, অব্যয়। হতশ্রী আমাকে জাগাও ভেঙে দাও, এইবেলা। বলো, জল জল...

ভাত উৎসব

ভাত উৎসব ভাত ফুটছে মাটির হাঁড়িতে ফুটতে ফুটতে জল মরে গেলে আবার জল ঢালা... ভাত ফুটছে তো ফুটছেই- মাগো, আর কতক্ষণ! বাপজান স্নান সেরে দাড়ি আঁচড়াচ্ছে। বুবুজান হলুদ শাড়ি পরে বসে আছে। আমি তাকিয়ে আছি ফুটন্ত হাঁড়িটির দিকে, মা কাঠের টুকরো গুঁজে দিচ্ছে চুলোয়। আজ আমাদের ভাত উৎসব।

তুমি রবিবার হও

তুমি রবিবার হও                রবিবার, আমার পছন্দতম দিন প্রতিদিন তুমি রবিবার হও। রবিবারের নিরালা সন্ধেবেলা আলো নিভিয়ে লিখতে চাই তুমি মুখর বাদলধারার মতো মৌন ছন্দ ডাকো চারপাশে জানালার ফাঁকে হাত বাড়িয়ে স্পর্শ নেব অকাতরে ঝরে পড়ার ভাসিয়ে দাও কপটতা নাম-যশ অবিশ্বাস

জ্যোৎস্নায় ভিজে যাচ্ছে মধ্যরাত্রি

জ্যোৎস্নায় ভিজে যাচ্ছে মধ্যরাত্রি প্ল্যানিং সিটির এক এঁদো গলির জীর্ণ বাড়ির ছাতে বসে রাতের আকাশ দেখছি নক্ষত্রদের ফুসুরফাসুর আলোর সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে সফেদ মেঘের গরাদ দিয়ে চুঁইয়ে পড়া জ্যোৎস্নায় ভিজে যাচ্ছে আমার সর্বাঙ্গ তারাদের মিছিলে ডানা ছড়িয়ে শ্বেত পরিরা এগিয়ে চলেছে অক্ষরেখা বরাবর মধ্যরাতে ছাতে বসে চাঁদের সঙ্গে কয়েকটি তরলমনস্ক নক্ষত্রের খুনসুটি দেখছি জাগতিক চাওয়া পাওয়া ভুলে বোহেমিয়ান সত্তা কোজাগরী সুরসঙ্গতে দিশেহারা নির্ঘুম রাতে তারাদের অভিসারের বেসামাল পদধ্বনি শুনছি আজনবী রাতের মেহফিলে জাঁহাপনা হয়ে  শ্বেত পরিদের পৌরুষ জাগানো নাচ দেখছি জ্যোৎস্নায় ভিজে যাচ্ছে মধ্যরাত্রি....

মুখোশের দিনরাত্রি

মুখোশের দিনরাত্রি ঘুরছে মুখোশ গ্রাম আর শহরে প্রতিক্ষণ গভীর পতনের শব্দ অবিরাম বাজখাই হে চক্রব্যূহ গ্রহণ করো আমার সমর্পণ লবনাক্ত কষ গড়িয়ে তোমাকে ছুঁতে চাই  রক্তচোষা চোখে বন্দি উত্তরাধিকার আমার জাগরণ ছিঁড়ে খায় হানাদার ঘুমন্ত সত্তায় আততায়ীর তাঁতবোনা কচি কচি পাতায় মৃত্যুর প্রহর গোনা দিনে রাতে হাটে বাজারে টহল দেয় ভয় জলকেলি আঁকে অনিবার্য মৃত্যুর জয় বিপন্ন মেঘ আর তারা পাড়ি দেয় দেশান্তর মুখ ঢাকে বাঁচার গান পুড়ে ছাই বনান্তর নিভু নিভু সলতেই দপদপ আলো চমকায়

ভবিতব্য

ভবিতব্য অত্যধিক শখ হইয়াছিল আলাদিনকে আমন্ত্রণ করিব। করিয়াছিলাম। তিনি আসিয়াছিলেন আমাদের রঙচটা মেঝেতে। অট্টহাসি পর্ব সমাধা করিয়া তাহার প্রদীপ ঘর্ষনজাত দৈত্যপ্রবর হূকুম করিতে আদেশ দিয়াছিলেন। জন্ম- মৃত্যু- শোক কী আমি চাহিতেছি- লোভে পড়িয়া শেষোক্ত বস্তুটি চাহিয়াছিলাম। তিনি "শোক" বলিয়াছিলেন ভ্রান্তিবশত আমি শুনিয়াছিলাম " শখ"। পুনর্বার তদ্রুপ অট্টহাসি- জন্ম- মৃত্যুর মাঝে তিনি শোক আনয়ন করিলেন। অতঃপর- তাহার জ্বলন্ত প্রদীপে পুড়িতে লাগিলাম। অদ্যাবধি পুড়িতেছি। শোক - জলধিতে ভাসিতেছে  শখ আহ্লাদ...

অভিনব প্রণয়ের পান্ডুলিপি

অভিনব প্রণয়ের পান্ডুলিপি সীবীচে দাঁড়িয়ে আগন্তুক রৌদ্রকণার চোখ খুবলে নিচ্ছে সমুদ্রের অন্দরমহল জলরাশির সেয়ানা শরীর এঁকেবেঁকে ঢেউয়ের সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে উপহাস অগাধ শূন্যতায় পাড়ি জমানো বালিহাঁসেরা আড়চোখে দেখে নিচ্ছে রৌদ্রকণার অভিসন্ধি অনড়  লকলকে জিভ সেঁধিয়ে যাচ্ছে জলরাশির নাভিকুন্ডের ঘেরাটোপ ধেয়ে আসা ঢেউয়ের দাপাদাপিতে জেগে উঠছে সীবীচের নধর দেহ বেহায়া রৌদ্রকণার ঠাই দাঁড়িয়ে থাকা স্পষ্ট করছে নিষিদ্ধ নগরীর চালচিত্র জলের অবয়ব ছুঁয়ে যাওয়াটুকুই লম্পট রৌদ্রকণার ভবিতব্য আলোড়নহীন জলের গভীরে অগোচরে আঁকা হয় সীবীচের মদির চুম্বন জলরাশির অন্দরমহল অপরূপ সানাইয়ের সুরে আবেশে বুজে চোখ দাঁড়িয়ে থাকা রৌদ্রেকণা সবেগে তাড়িয়ে দেয় প্রহরী জলো হাওয়া রচিত হয় অভিনব প্রণয়ের পান্ডুলিপি

ভুলে থাকা

ভুলে থাকা দীর্ঘ কিছু হেনস্থা রেখে যাই দুঃখ বলে আছে কি কিছু যা আছে সে তো ভুলে থাকা নেশাখোর সময় আমাকে জড়ায় শুধু পাহাড় ডাকে এখানেই আয় আমাকে টানে নদীটির তলপেট  গাছে গাছে থাকে ঝুলে আমার ইচ্ছেবাড়ি গুছিয়ে নিই নিজেকে নিরেট উধাও জানি না কবে কোথায় যাওয়া আসা সলতেতেই সংলাপ জ্বেলে আঁধার তাড়াই  দুঃখ রাখি না কিছু এমনই নেশা অনেক পথ আছে বাকি চলো পা বাড়াই

ফসিল হবার আগে

ফসিল হবার আগে বাজপাখির ধারালো নখে বেচারা মানচিত্র  উড়নচণ্ডী হাওয়ার দু' গালে অশ্রুর ফেনা দিশেহারা আমরা তাকিয়ে আছি বিস্ময় দারুচিনি দ্বীপ সুদূর পরাহত আকাঙ্ক্ষার বীজ নাভিশ্বাসে মুহুর্মুহু আমাদের বুকচাপড়ানো  হাহুতাশ কিংবা তীরন্দাজ ব্যর্থতা ফুটিফাটা ঘর হারানো মেহফিল বারুদ বারুদ দীর্ঘশ্বাস হরদম খুবলে নেয় নখরাঘাত  মহাশূন্যের এক কিনারায় ফাল্গুনী রাত আর একটি বাতাবি গাছের নির্ভয় নাচ নিচুতলার স্বপ্নেরা অনায়াস দর্শক উপর থেকে ঝরে পড়ছে ক্লোরোফিল তবুও নেই উদ্দামতা কুড়িয়ে পাওয়া গড়াগড়ি বাজপাখির নখ এগিয়ে আসছে ক্রমশ কুঁকড়ে যাওয়া চালচিত্র আর কতদিন আমাদের চাই এক নদী ফাল্গুনী রাত আয়ুধ চাই বাতাবি গাছের নির্ভয় নাচ একদিন মহাশূন্য গিলে নেবেই বাজপাখি নখ  উড়িয়ে দিই ঝুড়ি ঝুড়ি যন্ত্রণার আর্তনাদ ফসিল হবার আগেই  আমরা উচ্চারণ করি বাঁচতে চাওয়া ভাষা আর নির্ভয় পাখা ছড়াক সবাক মানচিত্র

শব্দেরা ফিরে এসো

শব্দেরা ফিরে এসো  সানাই সুরে আর পাতি না কান মায়ের ঢেঁকিতে ধানভানার শব্দ চাই বাসন মাজার শব্দ চাই খড় কাটার শব্দ চাই গোরুর গাড়ির চাকার শব্দ শুনব পাখির কিচিরমিচির শুনব ঘাট ফেরত মায়ের ভিজে শাড়ির সপসপ... মা আমার উনুনের ছাই দিয়ে বাসন মাজছে  বাবা গাড়ি গাড়ি ধান সাজাচ্ছে খামারে ভাই খিদে চোখে নামতা পড়ছে দুলে দুলে শব্দের ঢেউ ভাসিয়ে দিচ্ছে চিলতে উঠোন....

রিফিউজি

রিফিউজি আজও কী আমরা বাস্তুহারা  রিফিউজি! চোখ মেলেই তো চলেছি। নগ্ন  একজন মানুষ  রক্তস্নাত মৃত পড়ে পথে। উদাস চরাচর, আর  সাইকেলের ঘন্টি বাজিয়ে জোরে  তফাত যাও তফাত যাও

একান্ত উচ্চারণ

একান্ত উচ্চারণ উচ্চারণে সোচ্চার তাল তাল অভিমান গোটানো আস্তিনে অশ্রু টলটল উচ্চারণ তবুও টানটান রা কাড়া শব্দের মিছিলে ফিসফিস অরুণিমা আছে তো কোথাও অধরের তিলটির ডানার গন্ধে শোনো  অভিমানী আস্থার প্রগাঢ়তা  উচ্চারণে নির্ণিমেষ বহমান অতীত উচ্চারণ প্রথম শ্লোক প্রীতি মুখরতার  ফিরে এসো ঊর্ণনাভ মোহে অনর্গল নীরবতা বক্ষগহ্বরে কেটেছি খাল জল আর জল  "অরুণিমা অরুণিমা" শুধু সেই বিশ্বস্ত স্বরে  ভীড় করে  নীল স্বপ্নে বোঝাই সবাক তরনী চালসে ধরা চোখে জলছবি একান্ত উচ্চারণ

ভাদরগীতি

ভাদরগীতি  মন রেখেছি খোলা জানালায়। সাঁঝের বেলা ডানা মেলেছি ভরাভাদরে। হৃদয় জুড়ে মনসামঙ্গলের গান। ছেঁড়া চাটাই কী আনন্দে নাড়ু বাউরী হাবু বায়েন। সুরের দোলায় মিটমিটে লম্ফ জোনাকি কখন। সবাই মিলে " কলাতলার ঘাটে ভেলা ভাসিতে লাগিল গো..." সাঁঝের প্রহর এগিয়ে চলে। পোয়াতি বউ হাপুস রোদনে মেঘচরা উঠোনে। লতার ছোবলে মরদ তার মড়া লখিন্দর। ভাদরধারা ঝমঝম " কলাতলার ঘাটে ভেলা ভাসিতে লাগিল গো..

মুক্তমঞ্চ

মুক্তমঞ্চ             রসিক বটগাছটি হাসছে তো হাসছেই  উদর ঠাসা মাঠচরা গোরুদের জাবর কাটা কুমারী পোয়াতির কলঙ্ক মোচন গলায় দড়ি সারমেয়দের ভাদুরে সংগম ক্রিয়ার উল্লাস সাত গাঁ ঘোরা ভিখিরির থপ্ করে বসে পড়া এ সবেরই মুক্তমঞ্চ গাছটির ছায়াঘন তালুক হাসতে হাসতে গাছটি মাথা ঝাঁকাচ্ছে বয়স্ক পাতাগুলো খসে পড়ে টুপটাপ ক্রমে গাছতলা শুনশান ঝুপ্ করে নামে নীলসন্ধ্যা কৃষ্ণপক্ষের  গাছটির তোবড়ানো গালে চুমু আঁকে  প্রৌঢ়া বৃষ্টি ভাদ্রের  বুড়ো হাবড়া বটগাছটির শরীরে বৃষ্টির জোয়ার চকাস্ চকাস্ আবেশে গাছ বৃষ্টি ঠোঁট  মুক্তমঞ্চ জেগে ওঠে বৃষ্টির উষ্ণ আলিঙ্গনে

জলের অলিন্দে ভাসে মেঘের উঁকিঝুঁকি

জলের অলিন্দে ভাসে মেঘের উঁকিঝুঁকি মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভিজছে সমুদ্র ভিজে যাওয়া উল্লাস ফুটিয়ে তুলছে ঢেউ সারারাত ভেজা ঢেউয়ের মাতন দেখছি সমুদ্রের দামাল দেহে জ্বলজ্বল করছে মেঘের হরেক বর্ণমালা জলের গভীরে স্বচ্ছ বালির বিছানায় ঘুমিয়ে আছে অষ্টাদশী জলকন্যা মেঘভাঙা বৃষ্টির ঘ্রাণে শিহরিত তার বালিশ একরাশ জোনাকির জন্মগত আলো ভাসিয়ে দিচ্ছে বালির শয্যা জলকন্যার ঠোঁটে গড়িয়ে পড়ছে জলের কুচি জলকন্যার অধরে সমর্পণের তিরতির কাঁপন মেঘ বৃষ্টি আলো ঝুঁকে পড়ে মেপে নিচ্ছে সমুদ্রের গতিবিধি ঢেউয়ের লম্ফঝম্ফ মুখর হলেই মৌন সময়ের পাল্কীর পথ চলা  বালির বিছানায় গড়া হবে বাসর বৃষ্টি ফোঁটার আঁচে জেগে উঠবে জলকন্যার দীঘল বুক মেঘভাঙা বৃষ্টির ছোঁয়ায় রচিত হবে অভিনব প্রণয়ের পান্ডুলিপি অগাধ জলের অলিন্দে ভাসে মেঘের আনাগোনা

পূর্ণ হোক মগ্নতার ক্যানভাস

পূর্ণ হোক মগ্নতার ক্যানভাস              গভীর রাতে আমার মগ্নতা যখন ঊর্ধ্বগামী হয় খোলস ছেড়ে সত্তা যখন দেখে নিকষ আলো কতকগুলো ছায়া তখন জড়ো হয় আমার চারপাশে চুপচাপ হেঁটে যায় কথা বলে ফিসফাস স্পষ্ট টের পাই কারা যেন আছে থাকবে তারা অনন্তকাল আমার ঘুমের দেশেও তাদের ঘোরাঘুরি ধমনী উপধমনীতে তাদের নিঃশ্বাস মজ্জায় মজ্জায় ছায়াদের স্রোত আমার রোগ শোক মাড়িয়ে তাদের আনাগোনা একদিন তারা এসেছিল পরম আহ্লাদে ঘর বেঁধেছিল হাল লাঙ্গল কাঁধে মাঠে গিয়েছিল সোনার ফসলে ভরে ছিল মরাই পুকুরের জলে দিয়েছিল ডুব পরম খুশিতে সোহাগী রমণীর সাথে শুয়েছিল কবে যেন তারা চলে গেছে অদৃশ্যলোক এখনও দিনেরাতে তাদের চলাফেরা এখনও গভীর রাতে তাদের উষ্ণ শ্বাস ছায়ারা কি জানে আমার কথা বোঝে কি আমার কিছু বলতে চাওয়া পড়ে কি আমার না-লেখা লেখালিখি ছেয়ে থেকো ছায়া আমার জ্যান্ত বেলা রাত দুপুরে কখনো শুনি অচেনা আওয়াজ দেখি না-মানুষী কিছু গোঙানি আমার মগ্নতা প্রবল হয় আরো সুদীর্ঘ শালগাছের প্রাচীন ছায়ার কথা শুনি জানালার শার্সিতে কান পাতে আমার ভাষা ছায়াদের ধরবো বলে আরো মগ্ন হই নিস্তব্ধ স্রোতে অস্পষ্ট ছায়ারা

মরুতৃষার অজেয় ইশারা

মরুতৃষার অজেয় ইশারা তারাদের মৌন মিছিলে হাঁটছে চাঁদ সূর্য যে তারাগুলো কবরে শুয়েছিল যে তারাগুলো পঞ্চভূতে হয়েছিল লীন যে তারাগুলো মাতৃগর্ভে অপেক্ষা করছিল সেই আপাত মৃত অথবা আগামী অদৃশ্য জানালা দিয়ে ঝুঁকে পড়েছে সবাই আমার সত্তার ভিতর আর এক সত্তায় শুনছি ছায়াদের পদধ্বনি  মনে পড়ছে কবেকার সেই পাড়াগাঁর দিনরাত একটা বেতাল নৃত্যের তালে আমার অহর্নিশ  আদি নেই অন্ত নেই বরাভয়ের পীঠে চেপে বসে আছি হে জাহানের বাদশা এত অলিগলি তোমার ঘূর্ণনের অবিরাম স্রোতে ভেসে যাচ্ছে দেওয়া নেওয়া পরম রহস্যের মানে খোঁজার অভিধান তোমার মুঠোয় ঘামের রুধির স্পর্শ জলে ডাঙ্গায় গাছে পাতায় পাতায় ধরা দাও অদৃশ্য মাধুরী পান কর আমার বুক চেরা মোহ অচেনা চারপাশ অচেনা আত্মীয় বান্ধব কথা রাখার দায় তারা হয়ে হেঁটে যাচ্ছে মিছিল মিছিলের গা বরাবর মিছিল পাকদন্ডী ওঠানামা তবুও নীরব হেঁটে যাওয়া কারা যেন বলেছিল কষ্ট যাবে সুবর্ণ পৌষমাস কুঁয়ো ভর্তি স্বপ্নগুলো বালতি তুলে মেপেছিল জল নির্ঘুম রাতের কাঁথা পান্ডুলিপির মতন সাজিয়েছিল সুডৌল খোয়াবনামা জিঞ্জির খোলা আঁতুড়ঘর আমাকে ডাকে না আর নির্বাসনে মেতে আছি নেই তো আ

এসো দুর্নিবার ভাষা খুঁজি

এসো দুর্নিবার ভাষা খুঁজি দুর্নিবার এসো ভাষা খুঁজি সজল  রাত্রির গুহায় ঝরে পড়ে হিমসন্ধ্যা মুঠো ভরা গল্পের ক্লান্ত আবেশে টানাটানি সকল ব্যথা ফানুস নয় জেনো নিয়তির চালা উড়ে যায় তবুও বাঁচার গান অনাহুত পাখি আর তেপান্তরের মাঠ ধেয়ে এসো অবোধ রাখালিয়া বাঁশি কুলুপ আঁটা মুখের দুয়ার খোলো নির্জন জ্যোৎস্নায় ভিজেছে কবেই নীলপরী সোমত্ত অনুরাগ দাহ আজ লেলিহান রেখা পথভোলা মাঙ্গলিক চাউনি জাগে জোয়ার ফুরসত যত ডেকে নেবে নদী নিরবধি লাজুক বুকের মাঝে অমলিন বিরহলিপি এসো দুর্নিবার ভাষা খুঁজি...

মা

মা নিষ্ফল শোক ভেসে যায়। ঘর বাহির রঙিন চাটাই গড়ায় হেলেদুলে গাগরী চলন। খোলাচুল আলুথালু শাড়ির গিঁট বাঁধা মলিন পাড়। কড়া রোদ বারোমাস জলে ভেজা ঘোমটা অন্দর। মা আমার। শোক রাখে ভাঙা শরীর কলরবে তবুও তনুমন। আর কত সমর্পণ ঢালো দিনরাত! মা আমার। বাবার ঘোরাঘুরি, ঘরে ফেরা নিশুতি রাত ঘর্ঘর তোমার পরিশ্রম। একদিন ঘুচে যাবে হয়তো বনবাস! খালি হাঁড়ি সিকে ছেঁড়া ভয় চোখের পাতায়। মা আমার। গম্ভীর মুখ বাবা ঘুমায় জেগে থাকা সংসার। ঘাম মোছা অহর্নিশ পরিপাটি আঁচল। মা আমার। ভোর দেখা চৌকাঠ পেরিয়ে হনহন বাবার সাবেকি সাইকেল। জোড়া চোখ সুদূর দেখা  একান্ত সন্তর্পণ। মুড়ি মাখা কোলাহল শৈশব ভাই-বোন আমরা ক'জন। উপোস শীর্ণকায় আবার ক্লান্ত চলন। মা আমার। সাইকেল আসে যায় তবুও দুঃখ ঘোচানো স্বপ্ন আবর্তন। দৈন্য যাবে নিশ্চিত বড় হব আমরা ভাই-বোন। ছোটাছুটি হরদম আশ্রয় তোমার আঁচল মা আমার। মা আমার.....

অনুরাগ

অনুরাগ দূষণ গরবিত মাঝে                   রহি নাগরিক সঙ্গে। পুলকে পূরয়ে তনু              বৃক্ষ পরসঙ্গে।।

দেবতা

দেবতা যা হচ্ছে ভালো হচ্ছে না বলে ফেলি যদি অদৃশ্যে কার দাঁত কিড়মিড় শুনি আমি ভয়ে ঘেমে নেয়ে- আরাধ্য দেবতার কাছে হাতজোড় করে বসি অন্য কোনো ভক্তের স্তুতিতে দেবতা হয়তো আবেশে চোখ বুজে থাকেন আমি খতম হয়ে যেতে পারি।

লোহা

লোহা লোহাকে  সবাই বলে: বড্ড কঠিন লোহা বলে: আমার শরীর কঠিন আমাকে তরল করতে পারো... আমি জমাটও বাঁধতে পারি

সময়

সময় কোনও সকাল বিকেল ডাকে না আর হা পিত্যেশ বসে আছি কতবেলা দূরে কোথায় জ্যোৎস্না রাতের হিম গড়াগড়ি সময় জং ধরা দেহে অপলক আমাদের সকল চেয়ে থাকা  আর নাগাড়ে বলে যাওয়া দিনরাতের গল্প ক্রমশ বোবা হয় কোনও এক রোদ মাখা দুপুর  সামনে এসে দাঁড়ায় আমাদের বসে থাকা আর চেয়ে থাকা অজস্র সকাল বিকেলের গুঞ্জরণ শোনে গল্পেরা কথা বলে পরস্পর আমাদের নিশ্চুপ দহন স্বরলিপি খোঁজে অনড় সময় ক্রমে জল হয় চলো আমরা জলের গল্প শুনি

ছুঁয়ে যাও নাবিকের হাত

ছুঁয়ে যাও নাবিকের হাত এক সাগর নিকষ অন্ধকার বালুকাবেলায় হালভাঙা নাবিক আছি নিঃশব্দ পাহারায় তুমি এলে জাফরান আঁচলের ঘ্রাণ সর্বরিক্ত নাবিক তবে বুক চিতিয়ে মোহানায় তোমার কাছেই যাবো চলে জন্মান্তর ভালো লাগে না আর রণবাদ্য অর্থ যশের বিবমিষা দেমাক ধরো হাত জবালা যাই চলো কুশক্ষেত্রে শিখে নেবো ইতিহাস সত্য জন্মের যন্ত্রণার শরে উপহাস বিঁধে হবো সত্যকাম পিতা বাসনার বিভঙ্গ সকল তুমি নাও রত্নগর্ভা অনুচ্চারিত অক্ষরমালা তোমাকে দিলাম খুঁজে ফিরি কৈশোরের স্বপ্ন বোঝাই জাহাজ যেতে চাই যাবোই তোমার কাছে  জাফরান আঁচলের পাকে জড়িয়ে নাও ছেয়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে মাস্তুলের সোহাগ সত্যের খোঁজে উন্মাদ তোমার দারুচিন চোখ দিশারী হবেই যত হালভাঙ্গা নাবিকের.....

অপেক্ষা

অপেক্ষা শেষ নেই কোনো অপেক্ষার বাসি রুটি তরকারির মতো দিন চলে যায় যে মেয়েটি বলেছিল দেখা হবে অনিবার্য আবার খরস্রোতায় খড়কুটো হয়ে সে ভেসে গেছে ফাগুন চত্বরে নেমেছে শ্রাবণের মেঘ নির্জলা অপেক্ষা ফুটিফাটা তবুও কিছু কথা সুর খোঁজে প্রাচীন কোনো মানবী ডাকে ইশারায় সেজে ওঠে ঝুল জমা জানালার কপাট সোহাগী বাতাস জানিয়েছে নয় সুদূর চোখে চোখ রাখা

ঘুমন্ত গ্রহে ফুটে উঠছে বিন্দু

ঘুমন্ত গ্রহে ফুটে উঠছে বিন্দু অতি জাগতিক বিন্দুটি ক্রমে বিকটাকার মূর্তি ধারণ করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল মূহূর্তে দাপিয়ে উঠল বিদ্যুৎ চমক মূর্তিটির গহ্বরের মতো মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে বিন্দু স্ফুলিঙ্গ প্রতিটি বিন্দু ভয়ংকর মূর্তি রূপ ধারন করে মুষ্ঠিবদ্ধ করতে চাইছে মহা জগৎ দুই একটি গ্রহ এই বিরল দৃশ্য সন্ত্রাসে কম্পমান ঝড় বৃষ্টি বজ্র চিবোতে চিবোতে মূর্তিগুলো দিক দিগন্তে ছুঁড়ে দিচ্ছে উষ্ণ শ্বাস বিভিন্ন গ্রহে সাপের ফণার মতো দুলছে তাদের জটা আমার আলোহীন চোখ ভয় আর বিস্ময়ে জুড়িয়ে নিচ্ছে মানবজীবন সমুদ্র গর্জনের মতো উচ্চকিত দলা দলা হুংকারে ধসে যাচ্ছে আমার শ্রুতিপথ গ্রামের মাঠ ঘাট সমূহ জনপদ মূর্তিগুলোর পায়ে সঁপে দিচ্ছে আপাদমস্তক বশ্যতা ভয় ছড়ানোর ইজারাদারদের থাবা কিলবিল করে আমাকে ধরতে উদ্যত দু'হাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকছে নক্ষত্রলোক মৃত্যু স্বাভাবিক জেনেও আমার ঘিলু ছুটছে অমর্ত্যের ইশারায় আচমকা থেমে গেল ভয়াবহ দৃশ্যের চোখধাঁধানো উল্লাস বিকট মূর্তিগুলো আবার হয়ে উঠল বিন্দু আর বিন্দুগুলোর বুক চিরে বেরিয়ে এলো মূর্তিমান আরোগ্য আমার ঘুমন্ত গ্রহে ফুটে উঠেছে বিন্

চিৎকারে শান দিচ্ছে অজস্র বিদেশ

চিৎকারে শান দিচ্ছে অজস্র বিদেশ না চেনা বিদেশগুলো তাকিয়ে দেখছে নাভিশ্বাস ওঠা বন্দর কলিজায় ঘুন ধরা জাহাজের খামারে নেমে এসেছে ছায়াপথ ধুরন্ধর কার্টুনের আঁশের চাকচিক্য গিলে নিচ্ছে সামুদ্রিক অনুরাগ ঘূর্ণায়মান ছায়াপথের গোলকধাঁধায় অচেনা বিদেশ কুড়িয়ে নিচ্ছে মরনফাঁদ মেছেতা পড়া গালে আমি নামহীন বন্দরের জলছবি খুঁজছি আমার হাতের হরিৎ ক্ষেত্রে উল্কাবৃষ্টি ঢালছে দাবদাহ চাপ চাপ অশুভক্ষণ বন্দরের অলিগলিতে ঠেসে দিচ্ছে আড়িপাতা জনৈক ঈশ্বরের কোনো কমিটমেন্টের পাগলামি এখানে অচল অষ্টপ্রহরের বাকবিতণ্ডা প্রাচীন বন্দরে এগিয়ে আসছে গুটিসুটি এ দেশ আমি নই বলে চিৎকারে শান দিচ্ছে অজস্র বিদেশ পরাভবের ঢিলেঢালা চোরা চাউনি টেনে নিচ্ছে সমুদ্রের তলদেশ সমূহ লাজুকতা সর্পিল জলস্রোতে বন্ধক রেখে গান গাইছে ছায়াপথ  নর্তক আঁধারের মরচে পড়া ঘুঙুরে কান পেতেছে অসহায় জাহাজ রোঁয়া ওঠা সুর এঁকেবেঁকে ঘিরে আছে মুমূর্ষু বন্দরের একাকিত্ব এক অদৃশ্য অটোগ্রাফ আমাকে চিনিয়ে দিচ্ছে পাড়ি জমানোর মাইলস্টোন অনায়াস সাফল্যে গড়াগড়ি খাচ্ছে নিশ্চুপ শব্দের হালহকিকত জেগে উঠছে নাভিশ্বাস ওঠা বন্দর চিৎকারে শান দিচ্ছে অজস

আবর্তে ঘুরপাক খায় চরাচর

আবর্তে ঘুরপাক খায় চরাচর কোথাও কাঁপিয়ে সময় নামে এসে মেঘ রাতের উদরে লুকোয় দিন নাচের তালুতে  বাতাসের লুটোপুটি সেই তো তেমন দেখা প্রলয়ের শরীর অন্ধকারে চিৎ সাঁতারে তোমার কাছে যাওয়া আবর্তে মোড়া গুহার দুয়ার খুলে নির্বিশেষ তোমার ঘুমের পাশে রেখে যাবো নির্ঘুম রাতের প্রলাপ কোথাও ডিপ্লোম্যাটিক চোখ ইতস্তত শুষে নেয় জলের প্রবাহ ঘামের দাগ মুছে মুড়ে দেয় কাফন জেগে থাকা তারাটির দিগন্তের খোঁজে আঁকা শাদা নাকফুল রক্তের হিমস্রোতে জমাট বাঁধা গুহার ঘুম অতন্দ্র শ্লোকগুলি আনে ডেকে বৃষ্টি মুহুর্ত খুলে ফেলে ঘুমের নিদান আবর্তে ঘুরপাক খায় চরাচর

দেখি

দেখি আজন্ম শুধু শোকের কথা বলেছি খিদের কথা ধেয়ে আসা আঁধারের কথা এসব বলিনা আর এখন বাড়ির পাশের ডোবাটির কথা ভাবি সারারাত মাছেদের খেলা কানকো উজিয়ে গান আর জলের উল্লাস... আমার বাঁচার কবিতা মাছেদের পাখা চোখ বুজে দেখে যাওয়া জলের শরীর হিরণ্য মাছেদের ঝাঁক.....

চেতনার প্রহর ছুঁয়ে

চেতনার প্রহর ছুঁয়ে                        চেতনার প্রহর ছুঁয়ে অবচেতন নিহিত সুদূর ঘ্রাণে মাখি তোমার কবিতার খাতা উড়ন্ত শব্দের ঝিলমিল জোনাকি ডানা  আর না জানা প্রহরের চলনবিল খুঁজি দুরন্ত গায়ে জড়াই তোমার কবিতা ছটা  সারারাত ঘোরে থাকি সারাদিন চেয়ে থাকা বেহুঁশ সত্ত্বার কানের অলিন্দে নক্ষত্র গান পর্যটন কানামাছি হে চিরানন্দ দরবেশ ভালবাসার পাখা মেলে উধাও মুহুর্মুহু সারমেয় মার্জার খুনসুটি জাগে অহর্নিশ নতজানু গাছেরা জানে তোমার প্রণয় ভাষা অবিরাম মুখর যাপনেও একা হই বড়ো একা চেতনার প্রহর ছুঁয়ে তোমার কবিতা খাতা...

যত ঘুমঘুম প্রস্তাব

যত ঘুমঘুম প্রস্তাব ভাতের কথাগুলো নির্ঘুম ছুঁয়ে যায় প্রহর আজগুবি বলে হয় কি কিছুই অন্তত এই বেলা খাল বিল ছেঁচা গোঙানির স্বরলিপি অনন্ত ভাস্কর্যের পাখা হরদম পাখা মেলে টুঁটিটেপা দাগ  তুমিও যেমন ফর্দলেখা তেজারতি মোহ আমাকে জড়াও নিভে যাওয়া ছয়লাপ  নদী নদী কনসার্ট চাতাল হয় বেদনার খই ফোটা গান লুফে নেয় বাস্তুঘুঘু আমরা খুঁজে ফিরি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ রাতের ভেতর আর এক রাতের বিয়েন কাঠি নীরব উল্লাসে সাজে জরাসন্ধ ভোর ভাতের কথাগুলো রেখে যাই তুলে রাখি আপাতত ঘুমঘুম প্রস্তাব সাঁতার কঠিন কি তেমন মেঘবৃষ্টি ললাট.....

পুকুরটি

পুকুরটি বর্ষীয়সী পুকুরটি ফোকলা মুখে সরব  স্বজনদের কথা বলছে বোধহয়  কেউ নেই আর আশেপাশে  আদরের মাছেরা কবেই ধরা পড়েছে জালে সমবেত ব্যাঙের ডাকাডাকিও নামমাত্র তবে রোদের আঁচ আসে অবাধ পুকুরঘাট খাঁ খাঁ শূন্যতা টুপটাপ তরলমনস্কা চাষাবউটি কে জানে কোন ঘাটে লেদা তালগাছটি পুকুরটির মতোই মনমরা ভরা বয়সকালে তিরতির জলে পাড়ের জোয়ান গাছটির চোখ টেপাটিপি পুকুরটির বয়স তখন সবে উনিশ- কুড়ি "সেদিন কী আর আছে"-  দীর্ঘশ্বাসে পুকুরের আদিম চত্বর দিশেহারা হয়তো পুকুরটির দেহান্তর হলেই কেল্লা ফতে আয় উদোম ঝাঁপ আয় চাষাবউ আয় মাছের ঝাঁক পুকুরটি স্বপ্ন খুঁটে জল গভীরে

ওত পেতে থাকা রাত্রির বুকে নৌকা ভাসাব

ওত পেতে থাকা রাত্রির বুকে নৌকা ভাসাব পাখির কিচিরমিচির কিছুটা ফ্যাকাশে হতেই ওত পেতে থাকা রাত্রি নেমে এল বন বাদাড়ের মাথায় ঢাকা পড়ল কালো চাদর জলের তলায় শুয়ে পড়ল হাই তোলা মাছেরা আমাকে ডাকছে এক অদ্ভুত নীরবতা এক নদী কুয়াশার ভিতর দেখছি সন্ততির মুখ রোদ বৃষ্টির হাড়গোড় পড়ে আছে রাস্তায় আলপথে ঘুমে আচ্ছন্ন পদচিহ্ন জরাজীর্ণ বাড়িটির কার্নিশে ঝুলছে অন্ধকার বেহিসাবি চোখে রাত্রির অভিসন্ধি দেখছি প্রলাপের মতো উঠে আসছে প্রাচীন গুহা আর প্রত্ন কামনার আঁচে সেঁকে নিচ্ছি শরীর প্রস্তুত সারা হলেই আমরা নৌকা ভাসাব

ঠিকানা

ঠিকানা আকন্ঠ পিপাসা নিয়ে মানচিত্রে রাখি চোখ দিন রাত শুধু বাদুড়ের মতো পাখা ছড়াই খরচের তালিকা আমাদেরও ঠাঁই আজ না হয় কাল আমাদের কোনো পূর্বপুরুষ ছিল না নেই আজও জবাই হওয়ার আগে এসো কথার অবগাহন কৃতঋণ শব্দেরা তৎসম পঙক্তিতে বেমানান তাই চালচুলো খুদকুঁড়ো ঘাড়ে দৌড়ানো যাবো কোথায় অস্পষ্ট অলিগলি কুলকুচি মাখা সান্ত্বনা হননের প্রতিভাস  আমাদের হাসি নেই কান্না নেই কেবল স্তব্ধতা এসো অনায়াস লুকোচুরি এদেশ বিদেশ ছুরির ফলায় স্বপ্ন সাজাই বারুদের গন্ধে বাঁধা নির্লিপ্ত ভবিষ্যৎ রাজার চিঠি পৌঁছে যায় বেনামী বন্দর চিল শকুনের উচ্চারণে বাতাসের গান হাপুস চোখে ঝাপসা মানচিত্র পট ভেসে গেছে আমাদের ঠিকানা দস্তাবেজ

ইচ্ছেসাঁতার

ইচ্ছেসাঁতার গা থেকে খসে পড়ছে হলুদ পাতা। সময়ের দাগ বরাবর অসময়ের চলাফেরা- আড়ি আড়ি ভাব ভাব এবেলা ওবেলা।  আবার পাতা গজাবে কবে জানি না! ধুলোঝড়ের মুখোমুখি নদী নালা- জল কি অপবিত্র হয়! কে জানে! আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে গলে যাচ্ছে ইচ্ছেসাঁতার। মুহূর্তেরা কি চতুর্দশীর চাঁদ হয়! আবোলতাবোল রেখে যাই এইসব কৌতূহল। চরকির মতো খোলা আর বাঁধা- তরাসে চেপে ধরি মাটির আদিম উঠোন। বাঁধন খুলে ফেলা সহজ কী তেমন! জানি না তো! মাছরাঙা পাখিটির মতন বসে আছি- জলের ছোঁয়ায় মাছেরা পাখনা ছড়ায়। আমার কাজ শুধুই কি বসে থাকা! পাখার মাতন পাবো কোথায়! শিকড় বাঁধা সেই গ্রামটির গল্প বলো। চাঁদ ঢালা রাতে বালির চরে ছোটাছুটি বেলা, হলুদ বসন্ত দাও মুঠো মুঠো- রাতজাগা গাঁয়ের নদীটির কাছে চলো।

জল-বায়ু মাঠ-ঘাট

জল-বায়ু মাঠ-ঘাট জল বেমালুম হাপিস হবেই একদিন,খাল- বিল নদী-নালা ছিনতাই জমকালো। হাই ড্রেনে দুরন্ত গতি। ধুয়ে যাচ্ছে পবিত্রতা। লোপাট পুকুর, জলাশয়। অপচয় ভেসে যাচ্ছে। রুক্ষ ডাঙ্গা, নির্জলা ভূমি। আঁকিবুকি শাদা খাতায়। জল আঁকব। আহাম্মকি হাহুতাশ। জল... বায়ু ফানুস গুনছি দালান কোঠা। অরণ্য সাবাড়, পুরুষত্ব মতিভ্রম। বিষাক্ত ছোবলে ধুঁকছে বায়ু, আর কতক্ষণ? গিরগিটি চোখ, ধুঁয়ার চোটে - ফিনিস। হাপর টানা, বুকের ভেতর কাশির দমক, রক্তওঠা। খামচে ধরা, অতি লোভে তাঁতি ডোবা। উধাও বায়ু, মরু মরু... মাঠ অচিন শব্দ, জাদুঘরে। ধানের শীষ, সর্ষেফুল কুপোকাত। লাঙ্গল জোয়াল, বীজতলা আষাঢ়ে গল্প। গোরু বাছুর, রাখাল বাগাল নিরুদ্দেশ। মাঠ ঢেকেছে ফ্ল্যাট বাড়ি, শপিংমল। শৈশব চুরি, মাউস হাতে মাঠ আঁকছে সন্ততি। মাঠ দেখবো, মাঠ... ঘাট বাসি মড়া, চক্কর দিচ্ছে শকুন- চিল। কলসীর কানা, কথার কথা। পুকুর- দীঘি বলা বারণ, দূষণ ঘাঁটা। গ্রাম উজাড়, এল ই ডি বাল্বে মুখ লুকিয়ে ঘাটের মড়া। গাঁয়ের বউ- ঝি, ঘাটে জমায়েত, ব্যাকডেটেড। ঘাটের কপাল ফুটিফাটা, দেহান্তর। ঘাট খুঁজবো, ঘাট...

ফুঁ

ফুঁ কোলাহল বারান্দায় অথই স্তব্ধবাক হাড়ভাঙা আলসেমি চুঁয়ে নেমে আসা স্বাদ রোদ ভেজা সন্ধ্যা কুড়িয়ে আনে স্নান মুখরতা ভেলায় খয়েরী রঙের উড়ন্ত রোদন চাঁদ ওঠা বাতাসে কোনো এক মায়াবী সাঁতার তোমার ওড়নায় জড়ানো কিশোরীবেলা এই তো পেতেছি হাত ছুঁয়ে দেখো মধুমাস বহর ইশারা মানেই তো চলে যাওয়া নয় মুহূর্ত বেঁধে রাখে ঘাসে ছড়ানো মৌনতা  বাসি গল্পের মালসায় এখনও জমে আছে আঁচ ফুঁ সকল পাড়ি দেয় কচি কলাপাতা রং ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে আসা মহল্লায় কাকাতুয়া ঠোঁট খুঁটে খাওয়া সে তো আবহমান..... বাঁশির সুরে মনখারাপের উড়ো ছাই মরণফাঁদ দুয়ো দুয়ো..... বুকের ভেতর হরিৎ ঝিরিঝিরি আঁচলা জুড়ে আলো আলো.....

ভ্রাম্যমাণ বধ্যভূমি

ভ্রাম্যমাণ বধ্যভূমি গজিয়ে ওঠে আলপথ। হেলে পড়া বেলায় মাঠ চাঁদ হয়। জোৎস্নায় ফুঁ দেয় ধানের শীষ কুড়োতে যাওয়া। থই থই দীঘি হামাগুড়ি নামা হিম বুকে জড়িয়ে আদরের তুফান তোলে। জলের গভীরে অপরূপ আঁতুড়ঘর। কাতুকুতু  বন্দিশে আলমোড়া ভাঙ্গে ঘুমপাড়ানি গান। গুলঞ্চ লতার কচি কচি গালে হাসির ঝুরি দোল খায়। চুপচাপ রাত মাখে বনবাদাড়। কুকশিমার ডাল হাঁটার বর্ণমালা শেখে শুঁয়োপোকার দেহাতি চলনে। নিশাচর রাতের চোখে ঘুম নেই। হেলেঞ্চা পাহারা দিচ্ছে একা ভায়াদ লতাপাতাদের। বাতাসের ফস্টি নস্টি গড়িয়ে চলে রাতভর। দীঘির চিতানো বুকে কেঁদে ওঠে হিমশিশুর ঝরে পড়া খেলা। ভোরের আজানের আগেই পাততাড়ি গুটিয়ে নেয় আলপথ। দীঘির খিড়কি দুয়ার দিয়ে জোৎস্না ঢুকে পড়ে হুড়মুড়িয়ে। চাঁদ তাড়ানো স্বরলিপি ঝাঁকের কই হয়ে রোদ ডাকার মন্ত্র আওড়ায়। নিস্তব্ধতা খতম হলেই কোলাহলের বন্যায় ঝাঁ ঝাঁ কটমট রোদের ফলা। হে হলাহলের বাদশা ছায়া পাতো। দীর্ঘতর ছায়া।  রুধির কখনো দিন নয়। ঘাস বিছানো পথের জলো শরীর পুড়ে খাক।  ভস্মীভূত রাতকথারা সেঁধিয়ে যাচ্ছে দিনের আনাচেকানাচে। আবার কখনো থমথমে দীঘি জাগাবে হিম।  যাযাবর হং

আততায়ী

আততায়ী            ঘরের ভিতরে ঘর পাড়ার ভিতরে পাড়া দেশের ভিতরে দেশ মানুষের ভিতরে মানুষ জলাঞ্জলি আমার সত্বা নিশ্চুপ গজিয়ে ওঠে পচনের বাহার রূপান্তরের কিনারা বরাবর ছায়ার ছিবড়ে বানভাসি চালার আসরে উদ্দাম কবিতা গান গল্পগাথা ...

সংলাপে রেখেছি চোখ

সংলাপে রেখেছি চোখ ডুব সাঁতারে মেতেছি সেই চোখে ছুঁতে চাওয়া বাহানা মাত্র নেশায় চুর নোনা স্বাদ অশ্রুকণা স্বীকৃতি চায় নক্ষত্র গানের অমরত্ব আঁকে চওড়া সিঁথি সংলাপ হেঁটে যায় কথার কাঁধ বরাবর আংটির শুভকামনায়  আঙুলে আঙুলে বাজে জলতরঙ্গ অরণ্যের গভীরে গল্পেরা বাসর গড়ে তোমার চোখে সংলাপ হেঁটে যায়

না-লেখা ঘর

না-লেখা ঘর তেমন কোনো খবর নেই। ছুটে যাচ্ছি যেদিকে একটি না - লেখা ঘর                      ভেঙে পড়ার অবস্থায়। শেষ ভালো হলেই কী                       সব ভালো হয়!   রাজনীতি তেমন বুঝি না বলে কী ক্রমাগত ঠাঁই বদল? দিনরাত ধুলোবালি মাখা আর কাদা ঘাটা বুড়ো চাষি পোয়াতি ধানের গন্ধ শুঁকে ঝাঁপ দিল অন্ধকারে। সমূহ হাততালিতে আর  ছিঁচ কাঁদুনে শোকসভার গরিমায় ভেঙে পড়ল সেই না- লেখা ঘর।

স্বপ্ন

স্বপ্ন কতটুকুই বা তফাত! আমি জেগে স্বপ্ন দেখছি, আর তুমি ঘুমিয়ে। এ বছর আমের বোল এসেছে প্রচুর, যদিও মধুমাস আতঙ্কে আতঙ্কে... ঘরবন্দী হয়েই ঝেঁটিয়ে বিদায় করব করোনা ভাইরাস। আমাদের সন্তান বিকেল হলেই- খেলতে যাবে মাঠে, খেতে ফলন ভালোই হবে, হাটে বাজারে অনেকের সঙ্গে দেখা হবে। গল্প করতে করতে আমরা হেঁটে যাব নির্ভয়ে...

স্বগতোক্তি

স্বগতোক্তি তোমার বুঝি মন ভেঙেছে আমি আছি বৃন্দাবন।     আয় সখি আয় হৃদয় সাধি মথুরাতে মেঘমাতন।।   তোমার বুঝি রাগ হয়েছে আগুন চোখে দিগ্বিদিক।                                আয় না মেয়ে মান ভাঙ্গাবো বলছি আমি ঠিক ঠিক ঠিক।।           তোমার বুঝি ভাল্লাগে না খুঁজছো তুমি আগুন দিন।                             আয় চলে আয় মেঘমুলুকে নাচবো দুজন তা ধিন ধিন।।             তোমার বুঝি বিরহ রাঙা ডাগর চোখে মেঘনা বান।                               আয় না সখি দিব্যি বলছি তুই যে আমার মেহেরজান।।