পোস্টগুলি

শব্দেরা ফিরে এসো

শব্দেরা ফিরে এসো  সানাই সুরে আর পাতি না কান মায়ের ঢেঁকিতে ধানভানার শব্দ চাই বাসন মাজার শব্দ চাই খড় কাটার শব্দ চাই গোরুর গাড়ির চাকার শব্দ শুনব পাখির কিচিরমিচির শুনব ঘাট ফেরত মায়ের ভিজে শাড়ির সপসপ... মা আমার উনুনের ছাই দিয়ে বাসন মাজছে  বাবা গাড়ি গাড়ি ধান সাজাচ্ছে খামারে ভাই খিদে চোখে নামতা পড়ছে দুলে দুলে শব্দের ঢেউ ভাসিয়ে দিচ্ছে চিলতে উঠোন....

রিফিউজি

রিফিউজি আজও কী আমরা বাস্তুহারা  রিফিউজি! চোখ মেলেই তো চলেছি। নগ্ন  একজন মানুষ  রক্তস্নাত মৃত পড়ে পথে। উদাস চরাচর, আর  সাইকেলের ঘন্টি বাজিয়ে জোরে  তফাত যাও তফাত যাও

একান্ত উচ্চারণ

একান্ত উচ্চারণ উচ্চারণে সোচ্চার তাল তাল অভিমান গোটানো আস্তিনে অশ্রু টলটল উচ্চারণ তবুও টানটান রা কাড়া শব্দের মিছিলে ফিসফিস অরুণিমা আছে তো কোথাও অধরের তিলটির ডানার গন্ধে শোনো  অভিমানী আস্থার প্রগাঢ়তা  উচ্চারণে নির্ণিমেষ বহমান অতীত উচ্চারণ প্রথম শ্লোক প্রীতি মুখরতার  ফিরে এসো ঊর্ণনাভ মোহে অনর্গল নীরবতা বক্ষগহ্বরে কেটেছি খাল জল আর জল  "অরুণিমা অরুণিমা" শুধু সেই বিশ্বস্ত স্বরে  ভীড় করে  নীল স্বপ্নে বোঝাই সবাক তরনী চালসে ধরা চোখে জলছবি একান্ত উচ্চারণ

ভাদরগীতি

ভাদরগীতি  মন রেখেছি খোলা জানালায়। সাঁঝের বেলা ডানা মেলেছি ভরাভাদরে। হৃদয় জুড়ে মনসামঙ্গলের গান। ছেঁড়া চাটাই কী আনন্দে নাড়ু বাউরী হাবু বায়েন। সুরের দোলায় মিটমিটে লম্ফ জোনাকি কখন। সবাই মিলে " কলাতলার ঘাটে ভেলা ভাসিতে লাগিল গো..." সাঁঝের প্রহর এগিয়ে চলে। পোয়াতি বউ হাপুস রোদনে মেঘচরা উঠোনে। লতার ছোবলে মরদ তার মড়া লখিন্দর। ভাদরধারা ঝমঝম " কলাতলার ঘাটে ভেলা ভাসিতে লাগিল গো..

মুক্তমঞ্চ

মুক্তমঞ্চ             রসিক বটগাছটি হাসছে তো হাসছেই  উদর ঠাসা মাঠচরা গোরুদের জাবর কাটা কুমারী পোয়াতির কলঙ্ক মোচন গলায় দড়ি সারমেয়দের ভাদুরে সংগম ক্রিয়ার উল্লাস সাত গাঁ ঘোরা ভিখিরির থপ্ করে বসে পড়া এ সবেরই মুক্তমঞ্চ গাছটির ছায়াঘন তালুক হাসতে হাসতে গাছটি মাথা ঝাঁকাচ্ছে বয়স্ক পাতাগুলো খসে পড়ে টুপটাপ ক্রমে গাছতলা শুনশান ঝুপ্ করে নামে নীলসন্ধ্যা কৃষ্ণপক্ষের  গাছটির তোবড়ানো গালে চুমু আঁকে  প্রৌঢ়া বৃষ্টি ভাদ্রের  বুড়ো হাবড়া বটগাছটির শরীরে বৃষ্টির জোয়ার চকাস্ চকাস্ আবেশে গাছ বৃষ্টি ঠোঁট  মুক্তমঞ্চ জেগে ওঠে বৃষ্টির উষ্ণ আলিঙ্গনে

জলের অলিন্দে ভাসে মেঘের উঁকিঝুঁকি

জলের অলিন্দে ভাসে মেঘের উঁকিঝুঁকি মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভিজছে সমুদ্র ভিজে যাওয়া উল্লাস ফুটিয়ে তুলছে ঢেউ সারারাত ভেজা ঢেউয়ের মাতন দেখছি সমুদ্রের দামাল দেহে জ্বলজ্বল করছে মেঘের হরেক বর্ণমালা জলের গভীরে স্বচ্ছ বালির বিছানায় ঘুমিয়ে আছে অষ্টাদশী জলকন্যা মেঘভাঙা বৃষ্টির ঘ্রাণে শিহরিত তার বালিশ একরাশ জোনাকির জন্মগত আলো ভাসিয়ে দিচ্ছে বালির শয্যা জলকন্যার ঠোঁটে গড়িয়ে পড়ছে জলের কুচি জলকন্যার অধরে সমর্পণের তিরতির কাঁপন মেঘ বৃষ্টি আলো ঝুঁকে পড়ে মেপে নিচ্ছে সমুদ্রের গতিবিধি ঢেউয়ের লম্ফঝম্ফ মুখর হলেই মৌন সময়ের পাল্কীর পথ চলা  বালির বিছানায় গড়া হবে বাসর বৃষ্টি ফোঁটার আঁচে জেগে উঠবে জলকন্যার দীঘল বুক মেঘভাঙা বৃষ্টির ছোঁয়ায় রচিত হবে অভিনব প্রণয়ের পান্ডুলিপি অগাধ জলের অলিন্দে ভাসে মেঘের আনাগোনা

পূর্ণ হোক মগ্নতার ক্যানভাস

পূর্ণ হোক মগ্নতার ক্যানভাস              গভীর রাতে আমার মগ্নতা যখন ঊর্ধ্বগামী হয় খোলস ছেড়ে সত্তা যখন দেখে নিকষ আলো কতকগুলো ছায়া তখন জড়ো হয় আমার চারপাশে চুপচাপ হেঁটে যায় কথা বলে ফিসফাস স্পষ্ট টের পাই কারা যেন আছে থাকবে তারা অনন্তকাল আমার ঘুমের দেশেও তাদের ঘোরাঘুরি ধমনী উপধমনীতে তাদের নিঃশ্বাস মজ্জায় মজ্জায় ছায়াদের স্রোত আমার রোগ শোক মাড়িয়ে তাদের আনাগোনা একদিন তারা এসেছিল পরম আহ্লাদে ঘর বেঁধেছিল হাল লাঙ্গল কাঁধে মাঠে গিয়েছিল সোনার ফসলে ভরে ছিল মরাই পুকুরের জলে দিয়েছিল ডুব পরম খুশিতে সোহাগী রমণীর সাথে শুয়েছিল কবে যেন তারা চলে গেছে অদৃশ্যলোক এখনও দিনেরাতে তাদের চলাফেরা এখনও গভীর রাতে তাদের উষ্ণ শ্বাস ছায়ারা কি জানে আমার কথা বোঝে কি আমার কিছু বলতে চাওয়া পড়ে কি আমার না-লেখা লেখালিখি ছেয়ে থেকো ছায়া আমার জ্যান্ত বেলা রাত দুপুরে কখনো শুনি অচেনা আওয়াজ দেখি না-মানুষী কিছু গোঙানি আমার মগ্নতা প্রবল হয় আরো সুদীর্ঘ শালগাছের প্রাচীন ছায়ার কথা শুনি জানালার শার্সিতে কান পাতে আমার ভাষা ছায়াদের ধরবো বলে আরো মগ্ন হই নিস্তব্ধ স্রোতে অস্পষ্ট ছায়ারা